নাসির শিকদার: একজন স্বপ্নবাজ ম্যারাথন বাঙালি
❏❏
নাসির শিকদারের বয়স তখন পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই! এরইমধ্যে শরীরে বাসা বেঁধেছে নানারকম অসুখ-বিসুখ। হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, হাই কোলেস্টরল, নাক ডাকা, পায়ের পাতায় জ্বালাপোড়া, ডায়বেটিস, গ্যাসটিকের প্রদাহ, অত্যাধিক ওজন বৃদ্ধি, শক্তি কমে যাওয়া সহ নানাবিধ রোগের কারখানা তখন তার শরীর! রীতিমতো ভয় ও আতংকে তিনি একদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফেললেন, ‘বেশিদিন আর বাঁচবো না’। এতগুলো দৈহিক সমস্যা যাকে ঘিরে ধরেছে, তারমধ্যে মৃত্যুচিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক। ধীরে ধীরে কমে আসছিল তার কর্মস্পৃহা। মাঝেমধ্যে অফিসে না গিয়ে বাসায় বসেই কাজ করতেন।
একটা স্থবির জীবনের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে একদিন তিনি অটোফেজি নিয়ে একটা ভিড়িও পেলেন তার সহধর্মিণীর কাছ থেকে। এরপরই শুরু হলো তার ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম! তিনি শুরু করলেন স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা। বই, পত্রিকা, গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব ঘেঁটে তিনি সন্ধান করতে থাকলেন কীভাবে অবিসিটি মুক্ত হওয়া যায়! মৃতপ্রায় মনে তার জেগে উঠলো নতুন করে বাঁচার উদ্যম!
গবেষণালব্ধ জ্ঞান এবার নিজের উপর প্রয়োগের পালা। তিনি শুরুতেই বদলে ফেললেন তার খাদ্যাভাস। ফিরে গেলেন ন্যাচারাল ফুডের কাছে! তিনবেলার আহার কমিয়ে দুইবেলা খাওয়া শুরু করলেন। ছয়মাস পরে তার ওজন কমে গেল ১০ কেজি। শরীর একটু হালকা হলে তিনি নিজেকে দৌড়ের উপযোগী মনে করলেন। শুরু হলো তার দৌড়-জীবন!
প্রথমে থেমে থেমে দৌড়াতে লাগলেন, ক্লান্ত হলেও একেবারে থেমে যেতেন না। তার এই হাঁটা-দৌড় চলতে থাকলো দিনেরপর দিন। তখনও তার হার্ট দুর্বল; দৌড়ের জন্য উপযোগী না। কিন্তু নাসির শিকদারের পায়ে তো তখন দৌড়ের স্বপ্ন!
তাই তিনি শুরু করলেন হার্ট নিয়ে নানাবিধ পড়ালেখা। এবং খাবার থেকে বাদ দিলেন রান্নার তেল। রান্নায় তেলের বদলে যুক্ত হলো বিশুদ্ধ জল। তেল পুড়িয়ে রান্না বাদ দেওয়ার তিনমাস পর তিনি লক্ষ্য করলেন, তার হার্টের অসাধারণ পরিবর্তন। ৩ মাইলের দৌড় গিয়ে পৌঁছালো ৬ মাইলে। ছয়মাসে তার দৌড়ের দৈর্ঘ হলো ১০ মাইল। এভাবে হার্টের সাপোর্ট পেয়ে বছর না ঘুরতেই নাসির শিকদারের চোখে তখন ম্যারাথন দৌড়ানোর স্বপ্ন! পুরো ২৬ মাইলের দৌড়! ততদিনে তার ওজন কমে ৯২ কেজি থেকে ৭০ কেজিতে এসে দাঁড়িয়েছে।
হার্টের পরিপূর্ণ সাপোর্ট পেয়ে, তিনি তখন দৌড়কে শুধুমাত্র শারীরিক ব্যায়াম ভাবছেন না। দৌড়কে তিনি উপভোগ করছেন। তিনি দৌড়ে যাচ্ছেন, একইসাথে লাইভে যুক্ত হচ্ছেন, কথা বলছেন, পা চলছে সমান-তালে! প্রতিদিন তার নিজের সাথে নিজের দৌড় প্রতিযোগিতা। একটু একটু করে আগের দিনের নাসির শিকদারকে ছাড়িয়ে যেতে হবে!
তারপর এলো সেই ম্যারাথন স্বপ্নের পেছনে দৌড়ের পালা। তিনি নাম লেখাতে শুরু করলেন বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ম্যরাথন-দৌড় ইভেন্টে! প্রথমে ডাক পেলেন স্যান-ফ্রান্সিস্কো ম্যারাথনে! অবশ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দৌড়ের আগে তিনি অনুশীলনের জন্য দৌড়ে নিয়েছেন আরও কিছু ম্যারাথন।
এক সরকারি ছুটিরদিনে তিনি শুরু করেছিলেন তার প্রথম ম্যারাথন। অনেক কষ্টে তিনি আটঘণ্টায় এই দৌড় শেষ করেন! অথচ বর্তমানে তিনি তার অধিকাংশ ম্যারাথন শেষ করেন প্রায় সাড়ে তিনঘণ্টায়!
ধীরে ধীরে তার ম্যারাথন দৌড়ের ঝুলিতে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক দৌড়-মানচিত্র! নিউইয়র্ক সিটি ম্যারাথন, বোস্টন ম্যারাথন, হ্যাম্পটন্স ম্যারাথন, মায়ামী ম্যারাথন ও ৫০ কিলোমিটারের দুটি আল্ট্রা ম্যারাথন সহ ১২ টি ম্যারাথনে দৌড়েছেন তিনি মাত্র আটমাসে।
নাসির শিকদার মনে করেন, মনে একাগ্রতা থাকলে মানুষ তার যেকোনো প্রতিকূল অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন। মৃত্যুচিন্তায় আচ্ছন্ন একজন মানুষ দৌড়ের মাধ্যমে খুঁজে পেয়েছেন নতুন জীবনের সন্ধান। তাই তিনি তার নিজের জীবনের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প ও অনুশীলন পৌঁছে দিতে চান আরও হাজারো মানুষের কাছে! তিনি অবিসিটি মুক্ত পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন।
সুস্বাস্থ্যের পুথি!
✸✸ এই পুথির দশটি অনুচ্ছেদে দশরকম স্বাস্থ্য টিপস দেওয়া হয়েছে। যা নাসির শিকদারের প্রায়োগিক জীবন থেকে নেওয়া; যে টিপসগুলো আপনার সুস্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
✸ পুথিটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে স্বাস্থ্যসচেতনতায় অংশ নিন।
▶ সুস্বাস্থ্যের পুথি
▶ কথা: কালের লিখন
▶ কণ্ঠ: এলিজা পুতুল
▶ সংগীত: এইচ.বি হাফিজ
▶ নির্মাণ: কালাঞ্জলি মিডিয়া
▶ কনসেপ্ট ও তথ্য: নাসির শিকদার
⟲ স্বাস্থ্য সচতনতায় একটি অবিসিটি ফ্রি ওয়ার্ল্ড উদ্যোগ
✸ ফেসবুক || https://www.facebook.com/nasirsikderb…